মেটাভার্সের পথে ফেসবুক। মেটাভার্স আসলে কী? ইন্টারনেট দুনিয়া বদলে দিতে আসছে ফেসবুকের ‘মেটাভার্স’।
প্রভাষক_একাব্বর_রসায়নবিজ্ঞান
ফেসবুক পরিবর্তিত হবে মেটাভার্সে – ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে থাকবে মানুষ !
✓ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আর মেটাভার্স এর সম্পর্ক কি ?
মেটাভার্স একটি কালেক্টিভ ভার্চুয়াল শেয়ার্ড স্পেস যা সমস্ত ভার্চুয়াল জগতের এবং ইন্টারনেটের সমষ্টি। এতে বাস্তব জগতের ডেরিভেটিভস বা কপি থাকতে পারে, কিন্তু এটি বাস্তবতা থেকে আলাদা। “মেটাভার্স” শব্দটি প্রিফিক্স “মেটা” অর্থাৎ “বাহিরে”এবং স্টেম “verse” (Universe এর ব্যাকফর্ম) দিয়ে গঠিত। এই শব্দটি সাধারণত ইন্টারনেটের ভবিষ্যতের পুনরাবৃত্তির ধারণা বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়, যা 3D ভার্চুয়াল স্পেস দিয়ে গঠিত।
মেটাভার্স হচ্ছে এমন একটা অনলাইন জগৎ, যেখানে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের মধ্যেই গেমিং,অফিসের কাজ এবং যোগাযোগ সবকিছুই করতে পারবেন ইউজাররা। বর্তমান পরিকল্পনায় কাজটি হবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর হেডসেটের সাহায্যে। ডিজিটাল দুনিয়ায় সবাই দেখাশোনা, মেলামেশা করবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির মাধ্যমে।
সম্প্রতি ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ‘মেটাভার্স কোম্পানি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন।তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটির প্রথম উদ্যোগ হবে একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ওয়ার্কস্পেস।
জাকারবার্গের ঘোষণার পর থেকেই ‘মেটাভার্স’ শব্দটি মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু শব্দটির অর্থ বলতে গেলে কেউই জানে না। জানে না, শব্দটির স্রষ্টা কে !
মেটাভার্সের ধারণাটি অবশ্য বেশ অনেকদিন ধরেই গেমিং ও কল্পবিজ্ঞান জগতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
✓ মেটাভার্সের জন্ম-ইতিকথা :
‘মেটাভার্স’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন লেখক নিল স্টিফেনস। ২০১৭ সালে ভ্যানিটি ফেয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টিফেনসন জানান, নিজের একটি বিজ্ঞান-কল্পকাহিনিতে তিনি মেটাভার্স শব্দ এবং এর ধারণা প্রথম ব্যবহার করেন। এরপর প্রযুক্তি দুনিয়ায় শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত স্নো ক্রাশ উপন্যাসে নিল স্টিফেনসন এমন একটি জগতের কথা বলেন যেখানে সশরীরে না থেকেও উপস্থিত থাকবেন। সেটাই মেটাভার্স।
গুগল আর্থের স্রষ্টা জানিয়েছেন, স্টিফেনসনের মেটাভার্সের দুনিয়া তাকে গুগল আর্থ তৈরিতে অনুপ্রাণিত করেছে। এছাড়াও ভার্চুয়াল-রিয়েলিটির পথিকৃৎ ম্যাজিক লিপ ২০১৪ সালে স্টিফেনসনকে চিফ ফিউচারিস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়।
✓ মেটাভার্স আসলে কী?
বিবর্তনের পরিক্রমায় ইন্টারনেটের পরের ধাপই হচ্ছে মেটাভার্স।
মেটাভার্স হলো ভার্চুয়াল জগৎ। সহজ ভাষায় বোঝাতে বলা যায়, এটি হলো বাস্তবতার সাথে ডিজিটাল সংমিশ্রণ। এ জগতে ব্যবহারকারীরা যার যার চেহারার সঙ্গে মিল রেখে অ্যাভাটার বানাতে পারবেন। অ্যাভাটারগুলোকে ব্যবহারকারীরাই নিয়ন্ত্রণ করবেন।
ব্যবহারকারীরা নিজের ঘরে হাঁটলে, কথা বললে ভার্চুয়াল জগতের অ্যাভাটারও হাঁটবে, কথা বলবে। অর্থাৎ মেটাভার্স হচ্ছে এমন এক অনলাইন জগৎ, যেখানে ভার্চুয়াল দুনিয়ার মধ্যেই গেমিং, অফিসের কাজ এবং যোগাযোগের সবই করা যাবে। এ কাজ করা হবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট ব্যবহার করে।
✓ মেটাভার্স নিয়ে জাকারবার্গের পরিকল্পনা :
সম্প্রতি প্রযুক্তিবিষয়ক দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকারবার্গ জানিয়েছেন, তিনি এমন এক ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরি করবেন, যেখানে ব্যবহারকারী কনটেন্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজেও এর ভেতরে থাকবে। ব্যবহারকারী অন্যদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার অনুভূতি পাবে। এ অনুভূতি দ্বিমাত্রিক অ্যাপ বা ওয়েবপেজে সম্ভব নয়।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট দ্য ভার্জকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফেসবুক নিয়ে জাকারবার্গ তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, ‘এইভাবে যোগাযোগ করার জন্য মানুষের সৃষ্টি হয়নি।’ তিনি এমন ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরি করবেন যেখানে আপনি শুধু কনটেন্ট দেখবেন না, আপনি নিজে এর ভেতরে থাকবেন, আপনি তারই একটা পার্ট হয়ে দাঁড়াবেন। ‘মেটাভার্স’-এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে থ্রিডি কনসার্টে ভার্চুয়ালি নাচার সম্ভাবনার কথা বলেন জাকারবার্গ। ‘আপনি অন্যদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার অনুভূতি পাবেন, যেন আপনি অন্য কোথাও আছেন। যেটা দ্বিমাত্রিক ফেসবুক অ্যাপ বা ওয়েব পেজে সম্ভব নয়।’ অর্থাৎ এক জায়গায় থেকে একই সময়ে অন্য জায়গায় অন্য মানুষের সঙ্গে ভিন্ন পরিবেশ উপভোগ করার সুযোগ পাবে মানুষ।
ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইনফিনিট অফিস তৈরির কাজে হাত দিয়েছে ফেসবুক। সেখানে ব্যবহারকারী নিজের পছন্দমতো কাজের পরিবেশ তৈরি করে নিতে পারবেন।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ‘ইনফিনিট অফিস’ বা ব্যবহারকারীদের আদর্শ কর্মস্থল সেবা তৈরিতে কাজ করছে ফেসবুক।২০১৪ সালে ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ভিআর কোম্পানি ‘অকুলাস’ কিনে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালে ‘ফেসবুক হরাইজন‘ সেবা চালু করে ফেসবুক। ওই ‘ইনভাইটেশন-অনলি’ বা আমন্ত্রণভিত্তিক ভার্চুয়াল জগতে ব্যবহারকারীরা অকুলাস হেডসেট ব্যবহার করে কার্টুন অ্যাভাটার-এর মাধ্যমে কথা বলা বা মেলামেশার সুযোগ পান।তবে বর্তমানের হেডসেটগুলোর মতো মাথায় এত বড় যন্ত্র লাগিয়ে থাকাও যাবে না।
তবে তার দাবি, ফেসবুকের ‘মেটাভার্স’ যে কোনো প্ল্যাটফর্ম থেকে ব্যবহার করা যাবে, এর মধ্যে আছে ভিআর, এআর (অগমেন্টেড রিয়ালিটি), পিসি, মোবাইল ডিভাইস এবং গেমিং কনসোল।
জাকারবার্গের জানান, ভবিষ্যতে কেবল ফোনকলে যোগাযোগ করার বদলে এক ব্যবহারকারী অন্য ব্যবহারকারীর পাশে গিয়ে বসতে পারবেন। এ খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে ফেসবুক। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি ভিআর পণ্য নির্মাতা অকুলাস কিনে নিয়েছে। ২০১৯ সালে চালু হয় ফেসবুক হরাইজন সেবা। এই ভার্চুয়াল জগতে অকুলাস হেডসেট ব্যবহার করে কার্টুন অ্যাভাটারের মাধ্যমে কথা বলার বা মেলামেশার সুযোগ পাওয়া যায়।
✓ মেটাভার্সের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ !
অনেকের সন্দেহ, মেটাভার্সের মূল্য উদ্দেশ্য ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করা।ভিআর বিশেষজ্ঞ ভেরিটি ম্যাকিনটশের ধারণা, ভিআর বা এআর প্রযুক্তিতে ফেসবুকের বড় বিনিয়োগের একটা বড় কারণ হলো ‘গ্রাহক ডাটা’। এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য পাওয়া যায়। যেকোনো ডাটা ব্যবসায়ীর এটি রীতিমতো সোনার খনি। এছাড়াও ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ভার্চুয়াল জগৎকে নিজেদের উপনিবেশ বানিয়ে ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন ম্যাকিনটশ।
#বাংলা_সাহিত্য #বাংলাদেশ #bangladesh #banglasahitya #storyandarticle
Post a Comment